প্রশ্ন : সেহেরি খাওয়ার উৎকৃষ্ট সময় কখন? রাত ১২টার পর পর খেলে হবে কি না?
উত্তর : সেহেরির ক্ষেত্রে উত্তম হচ্ছে মূলত তাখির
করা অর্থাৎ দেরী করে খাওয়া (তাখিরুস সাহুর),
আর ইফতার তাড়াতাড়ি খাওয়া (তাজিরুল ইফতার)।
ইফতারটা আগে হবে, আগে বলতে আবার
সময়ের আগে না, সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে। আর সেহেরির ক্ষেত্রে বিলম্ব হবে। যত আপনি সুবহে সাদিকের আগ মুহূর্তে সেহেরি খেতে পারবেন, ততই উত্তম। শুধু উত্তম নয়, বরং এটি অনুসরণ করতে সব নবী ও রাসূল তাঁদের উম্মতদের নির্দেশ দিয়েছেন। সব নবী ও রাসূল যে তিনটি বিষয়ে তাঁদের উম্মতদের বলেছেন, এটি হচ্ছে তার মধ্যে একটি।
আপনি কেন ১২টার মধ্যে সেহেরি খেয়ে নেবেন? সেহেরি ১২টার মধ্যে খাওয়ার প্রয়োজন নেই।
বর্তমানে সেহেরির শেষ সময় হচ্ছে অস্ট্রিয়ায় রাত
প্রায় ৩ টা ৪৫ মিনিট থেকে ৫০ মিনিট। এর জন্য
অস্ট্রিয়ায় বিভিন্ন দেশের ক্যালেন্ডারে মিনিটের কিছু
তারতম্য হয়ে থাকে। এটা এমন কোন বড় সমস্যা না।
সে ক্ষেত্রে আপনি রাত ৩টা ২০-এর দিকে খেয়ে নিতে পারেন। এখন আপনি যদি রাত ১২টায় খেয়ে ফেলেন, তাহলে তো দিনের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। সে জন্য উত্তম হচ্ছে আপনি যতটা বিলম্ব করতে পারেন, ব্যবস্থাপনাটা সেভাবে করাই ভালো। তাছাড়াও পূর্বে
খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে ফজরের নামাজ বাদ পড়ে যেতে
পারে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানের আলোকে সুবহে সাদিক বা ফজরের ওয়াক্ত কখন শুরু হয় !
অনেকেই বছরের বিভিন্ন সময় নফল রোজা রাখতে চান, কিন্তু সমস্যা হল রমজান মাস ছাড়া বছরের অন্যান্য সময় গুলোতে ফজরের নামাজের আজান সাধারণত ওয়াক্ত শুরু হওয়ার কিছু পরে দেয়া হয়। তাই অনেকে বুঝতে পারেন না যে সেহরির শেষ সময় তাহলে কখন।
অনেকে ইসলামিক সারা বছরের স্থায়ী রোজার রাখার সময়সূচী ফলো করেন। সেটা খুবই ভালো, কিন্তু যারা জানতে চান যে কিভাবে এই সময়সূচী প্রণয়ন করা হয় তাদের জন্য মূলত এই পোস্ট।
আমরা জানি যে সুবহে সাদিক হলো সেই সময় বা ক্ষণ যখন থেকে রোজা শুরু করতে হয় এবং ফজর নামাজের ওয়াক্তও একই সময় থেকেই শুরু হয়। কিন্তু এই সুবহে সাদিক ব্যাপারটা কি সেটা একটু আলোচনা করা যাক।
রাতের শেষ দিকে পূর্ব দিগন্তের উভয় দিকে ক্ষীণ (দিগন্তের সাথে ভার্টিক্যালি) প্রশস্ত আকারে যে আলো প্রকাশ পায় তখন থেকে সাহরির সময় শেষ হয়ে যায় এবং এরপর থেকেই ফজরের সময় শুরু হয়। ফিকহের পরিভাষায় এই সময়টির নাম সুবহে সাদিক। এই সময়টির ব্যাপারেই আল্লাহ কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেছেন-
‘আর তোমরা পানাহার কর যতক্ষণ না রাতের কাল রেখা থেকে ভোরের সাদা রেখা স্পষ্টরূপে তোমাদের নিকট প্রতিভাত হয়।’-সূরা বাকারা ১৮৭ এই আয়াতে ভোরের সাদা রেখার দ্বারা সুবহে সাদিকের আলোকে বুঝানো হয়েছে।
এবার আসা যাক এই সুবহে সাদিক এর টাইম একুরেট কখন শুরু হয় সেটা নিয়ে- আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের বক্তব্য অনুযায়ী সুবহে সাদিক বা ফজর শুরু হয় সূর্যের দিগন্তের নিচে ১৮° তে থাকা অবস্থায়। সূর্যোদয়ের আগে ভোরের সময় পূর্ব আকাশে এবং সূর্যাস্তের পর সন্ধ্যার সময় পশ্চিমাকাশে যে আলো দেখা যায় তাকে জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভাষায় টয়লাইট (Twilight) বলা হয়। আরবি পরিভাষায় টোয়লাইটকে (শাফাক) বলা হয়, বাংলায় বলা হয় লালীমা।
সূর্য যখন দিগন্তের ৬° নিচে থাকে ঐ সময়ের আলোকে Civil Twilight, যখন ১২° নিচে থাকে যখন তখনকার আলোর নাম Nautical Twilight,আর Astronomical Twilight হল ঐ আলো, যা সূর্য দিগন্তের ১৮° নিচে থাকা অবস্থায় দেখা যায়। পর্যবেক্ষকের অবস্থানের সাপেক্ষে ৩৬০ ডিগ্রি অনুপাতে সূর্য দিগন্তের কত
ডিগ্রি নিচে রয়েছে সেটাই এইখানে বোঝানো হয়েছে।
এখন কথা হল শরীয়ত ইবাদতের সময়কে নির্দিষ্ট কোনো ডিগ্রির সাথে যুক্ত করে দেয়নি। যুক্ত করেছে দৃশ্যমান আলামত বা পর্যবেক্ষণের সাথে। তবে যদি বার বার পর্যবেক্ষণ/নিরীক্ষণের পর জ্যোতির্বিজ্ঞানের হিসাবের শুদ্ধাশুদ্ধির ব্যাপারে পরিপূর্ণ আস্থাশীল হওয়া যায়, তাহলে তা গ্রহণ করতে এবং তার আলোকে সময়সূচী তৈরি করতে কোন সমস্যা নেই।
#তথ্য_সংগৃহীত